রমজান মাসের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও বরকতময় রাত হলো লাইলাতুল কদর—যাকে পবিত্র কুরআনে “হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম” বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই রাতের অসীম ফজিলত, আল্লাহর বিশেষ রহমত ও মাগফিরাতের দ্বার উন্মুক্ত হওয়া এবং ইবাদতের মাধ্যমে অনন্ত সওয়াব লাভের সুযোগ মুমিনদের জন্য এক অপার অনুগ্রহ।
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
সুরা আল-কদরে আল্লাহ তাআলা বলেন:
“নিশ্চয়ই আমি এটি (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরাঈল) অবতীর্ণ হয় তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে প্রত্যেক কাজে। শান্তিই শান্তি, তা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।” (সুরা আল-কদর, ৯৭:১-৫)
এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি সওয়াবের। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদত করে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (বুখারি, মুসলিম)
লাইলাতুল কদর কখন?
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, এই রাত রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে (২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রাত) খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষত ২৭তম রাত নিয়ে অনেক আলেমের দৃঢ় মত রয়েছে। তবে আল্লাহ তাআলা এর সঠিক সময় গোপন রেখেছেন, যাতে বান্দা বেশি বেশি ইবাদত করে।
কীভাবে ইবাদত করবেন?
১. নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াত: এই রাতে নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সময় কাটানো উত্তম।
২. দোয়া ও ইস্তিগফার: রাসুল (সা.) এর শিখানো দোয়া—
“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি”
(হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসো, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও।)
৩. সদকা ও ভালো কাজ: গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা, পরিবার-সমাজের কল্যাণে কাজ করা।
৪. ইতিকাফ: শেষ দশকের ইতিকাফে থেকে লাইলাতুল কদর তালাশ করা সুন্নত।
সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে কদরের শিক্ষা
লাইলাতুল কদর কেবল ইবাদতের রাতই নয়, এটি আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধি, সমাজ সংস্কার ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ। এই রাতের বরকত আমাদেরকে ধৈর্য, তাকওয়া ও মানবতার সেবায় উদ্বুদ্ধ করুক।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে লাইলাতুল কদরের ফজিলত লাভের তাওফিক দিন। আমিন।