এপ্রিল ২৮, ২০২৫ ৩:৩২ অপরাহ্ণ
সোমবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গোধূলি লগ্নে ভালোবাসার রক্তিম রং

আমতলী গ্রামের প্রতাপশালী হাশেম আলীর একমাত্র পুত্র হাসান আলী। হাসান আলী একজন ছাব্বিশ বছরের লম্বা, মোটা,শ্যামলা বর্ণের একজন যুবক। মুখে গোঁফ ,দাড়ি রয়েছে ।তার নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে ধান ,গম,ভুট্টা ,পাটের। ব্যবসার সুবাদে বিভিন্ন গ্রামে যায় ।

হাসান আলী একদিন ধান কিনতে শিমুলতলী গ্রামের সৈকত আলীর বাড়ি যায় । সৈকত আলী একজন দরিদ্র কৃষক । তার নিজস্ব জমি নেই । অন্যের জমি লিজ, বর্গা নিয়ে কৃষি কাজ করেন। সৈকত আলী অক্ষর জ্ঞানহীন মানুষ। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে । বড়ছেলে ঢাকায় একটি চায়ের ফ্যাক্টরীতে কাজ করে। আরেক ছেলে ছোট । তার মেয়ের নাম হালিমা। হালিমা দ্বাদশ শ্রেণীর মানবিক শাখার একজন মেধাবী ছাত্রী।
হালিমা দেখতে বেশ লম্বা,স্বাস্থ্যবতী, ফর্সা , মুখের আকৃতি গোলাকার।

সৈকত আলীর কাছ থেকে হাসান আলী পঁচিশ`শ টাকা দরে, এগারো মণ ধান কিনে নেয়। হাসান আলী সাড়ে চার হাজার টাকা দেওয়ার পরে, বাকি টাকা পরবর্তী পাঁচ দিন পর দিতে চাই । হাসান আলীর নাম্বার সৈকত আলী নেয়,পাঁচ দিন পর কল দেওয়ার জন্য। সৈকত আলীর কাছে মোবাইল নেই। তার মেয়ে হালিমার মোবাইল দিয়ে, কল দেয় হাসান আলীকে।

সৈকত আলী পাঁচ দিন পর, হাসান আলী কে কল দেয় টাকা নেওয়ার জন্য । হাসান আলী ধান কেনার জন্য, পাশ্ববর্তী বোয়ালিয়া গ্রামে গেছে । হাসান আলী ধান নিয়ে আসতে দেরী হবে, বলে জানাই সৈকত আলীকে। হাসান আলী পরের দিন সন্ধ্যায় শিমুলতলী বাজারে দেখা করতে বলে। পরের দিন ও হাসান আলী ধান কেনার জন্য তালতলী গ্রামে যায়। সেদিন ও কল দিয়ে সৈকত আলী হতাশ হয়। পরের দিন বিকালে হাসান আলী কল দিয়ে হালিমাকে বলে,` চাচা কে বলবেন , আমি তিন দিন থাকবো না। ধানের গাড়ি নিয়ে শহরে যাবো । শহর থেকে এসে চাচা কে টাকা দিবো।`

তিন দিন পর হাসান আলী শহর থেকে, ধান বিক্রি করে সকালে বাড়িতে আসে। বিকালের দিকে বটতলী গ্রামের তার ধানের গুডাউনে যাওয়ার পথে, হালিমার সঙ্গে দেখা হয়। বটতলীর বাজার আমতলী ,শিমুলতলী, কদমতলীর বাজারের থেকে বড়। বটতলীর বাজারের পাশে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা আছে ।

হালিমা তার বান্ধবীদের সঙ্গে কোচিং শেষ করে বাড়ি যাচ্ছিলো। হাসান আলী হালিমাকে বলে, চাচাকে সন্ধ্যায় শিমুলতলীর বাজারে দেখা করতে বলবেন। হাসান আলী সন্ধ্যায় সৈকত আলীকে বাকি টাকা পরিশোধ করে দেয়।

পরের দিন বিকালে হাসান আলী গুডাউনে দাঁড়িয়ে ব্যবসার হিসাব নিয়ে ভাবতে ভাবতে পায়চারী করছিলো,এমতাবস্থায় হালিমাকে দেখতে পায়।
হালিমার সঙ্গে কথাবার্তায় বেশ পছন্দ হাসান আলীর হয়েছে। হাসান আলী ভাবে হালিমা রূপবতী ও আছে। বিয়ে করতে পারলে মন্দ হতো না!
একদিন রাতে হাসান আলী কল দিয়ে হালিমার খোঁজ খবর জানতে চাই । বিকালে গুডাউনে থাকা অবস্থায় হালিমার দেখা পায়। যেদিন কোন কারণ বশত দেখা হয় না। সেই দিন রাতে হাসান আলী কল দিয়ে হালিমার খোঁজ খবর নেয়।

এভাবে হাসান আলী ও হালিমার মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয় । একদিন রাতে হাসান আলী কল দিয়ে বলে, বিকালে কোচিং শেষ করে, শিমুলতলী গ্রামের বিলের ধারের বড় আম গাছটার নিচে দেখা করতে বলে।
বিলের ধারের বড় আম গাছটার নিচে, বিকালে বেলায় সাধারণত মানুষজন কম যায়। গাছের তলায় দাঁড়িয়ে গোধূলির রক্তিম আভায় প্রাকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য পাওয়া যায়!

হাসান আলী বিকালে গাছ তলায় এসে অপেক্ষা করতে থাকে; হালিমা কোচিং শেষ করে আসে। গাছ তলায় দুজনে বসে, গল্প করতে থাকে। হাসান আলী গোধূলির রক্তিম আভায় মনের গহীনে বিঁধে থাকা, গোপন কথা ডানা ঝাপটা পাখির মতো হালিমার সম্মুখে মেলে ধরে। হালিমা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করে।

এরপর দুজনের মধ্যে সম্পর্ক পাখির মতো,
মুক্ত আকাশে উড়াল দেয়। তাদের মধ্যে এভাবে সাত মাস কাটে,বেশ ঘনিষ্ঠভাবে প্রেমের সম্পর্কে ।

একদিন বর্ষাকালে বিকালে হাসান আলী গুডাউনে ছিল গুডাউনে কেউ না থাকায় কোচিং শেষে হালিমা কে গুডাউনে আসতে বল । হালিমা কোচিং শেষে গুডাউনে আসলে,তারা কিছুক্ষণ গল্প করার পর বৃষ্টি আরম্ভ হয়। গুডাউনে বৃষ্টির সময়‌ বিজলীর শব্দে ভয়ে, হালিমা হাসান আলীকে জড়িয়ে ধরে। তারা দুজনে শারীরিকভাবে অন্তরঙ্গ হয়।

হাসান আলী পরবর্তীতে মাঝে মধ্যে যখন গুডাউনে লোকজন থাকে না তখন হালিমা কে গুডাউনে আসতে বলে। দুজনে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় । এভাবে প্রায় পাঁচ মাস চলতে থাকে। হালিমা গর্ভবতী হয়ে পড়ে।

হালিমার গর্ভবতী হওয়ার বিষয় হাসান আলী কে জানায়। হাসান আলী গোপনে বিয়ে করে, তার বাবার বন্ধুর মেয়ে সাবিনা কে । হাসান আলী বিয়ের একদিন আগে থেকে, মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। হালিমার কোন খোঁজ খবর নেয় না ।কয়েক দিন থেকে হাসান আলীর সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে, হালিমা একদিন বিকালে কোচিং শেষ করে গুডাউনে যায়। গুডাউনে গিয়ে হালিমা হাসান আলীর বৃদ্ধ কর্মচারী করিম মিয়ার কাছে জানতে চাই।
হাসান আলী কোথায় আছে?
করিম মিয়া বলে, উনি তো এক সপ্তাহ আগে বিয়ে করেছে। এখন নতুন শ্বশুড় বাড়িতে আছে ।হয়তো কয়েক দিনের মধ্যে চলে আসবেন।

হাসান আলী বিয়ের কথা শুনে হালিমা ।
বাড়ি না গিয়ে, বিলের ধারের বড় আম গাছে, গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁসি দেয়।

হালিমার যে প্রেমের সূত্রপাত হয়েছিলো শেষ বিকেলে গোধূলির রক্তিম কিরণে। সেই প্রেমের জন্য তার শেষ বিকেলে গোধূলির রক্তিম কিরণে জীবনের প্রদীপ নিভে গেছে ।

এই বিভাগের সর্বশেষ