এপ্রিল ২৯, ২০২৫ ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ
মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আল-আকসায় অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলা: ধর্মীয় উৎসবের আড়ালে নতুন আগ্রাসন

দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ফের হামলা চালিয়েছে শত শত অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারী। সোমবার (১৪ এপ্রিল) ইহুদি ধর্মীয় উৎসব ‘পাসওভারের’ দ্বিতীয় দিনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয় এ পরিকল্পিত আগ্রাসন।

জেরুজালেমের ইসলামিক ওয়াকফ বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওইদিন ৭৬৫ জন অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইসরাইলি পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আল-মুগাররাবা গেট দিয়ে আল-আকসায় প্রবেশ করে। তারা দলবদ্ধভাবে মসজিদের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় এবং উস্কানিমূলক কার্যক্রমে লিপ্ত হয়।

এর আগের দিন রোববারও (পাসওভারের প্রথম দিন) প্রায় ৫০০ জন অবৈধ দখলদার একইভাবে পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করে হামলা চালায়।

পাসওভার: ধর্মীয় আবরণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য?

‘পাসওভার’ ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যা হজরত মূসা (আ.)-এর সময় মিসর থেকে ইসরাইলিদের মুক্তির স্মরণে উদযাপিত হয়। কিন্তু এই উৎসবের ছায়ায় এখন আল-আকসা মসজিদে হামলা যেন নৈমিত্তিক রূপ নিচ্ছে।

ফিলিস্তিনি ওয়াকফ ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কেবল ২০২৫ সালের রমজান মাসেই অন্তত ২১ বার আল-আকসা মসজিদে এমন অবৈধ অনুপ্রবেশ ও আগ্রাসন চালানো হয়েছে। জেরুজালেম গভর্নর অফিসের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই (জানুয়ারি-মার্চ) অন্তত ১৩,০৬৪ জন বসতি স্থাপনকারী আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে।

পবিত্র স্থানে রাজনৈতিক খেলা

আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদের কাছে তৃতীয় পবিত্র স্থান হলেও, ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা একে ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে দাবি করে। তারা মনে করে, এখানেই তাদের প্রাচীন দুটি উপাসনালয় ছিল। এই দাবিকে কেন্দ্র করেই বছরের পর বছর ধরে চলছে উত্তেজনা, সংঘর্ষ আর ক্রমাগত দখল প্রচেষ্টা।

জেরুজালেম বিশেষজ্ঞ ফাখরি আবু দিয়াব বলেন, “পাসওভারের ছুটি সামনে রেখে চরমপন্থি ইহুদি গোষ্ঠীগুলো আল-আকসা প্রাঙ্গণে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।” তিনি জানান, উগ্রবাদীরা এখন ডোম অব দ্য রকের কাছাকাছি পশু কোরবানি করার মতো উস্কানিমূলক কাজ করছে, যা মসজিদের পবিত্রতা এবং মুসলিম আবেগে চরম আঘাত।

তিনি আরো বলেন, “এই তৎপরতা শুধু উস্কানিমূলক নয়, বরং আল-আকসাকে ইহুদিকরণের সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক পদক্ষেপগুলোর একটি। চরমপন্থি ইহুদি মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রত্যক্ষ মদদে এবং দখলদার পুলিশের সমর্থনে এসব ঘটনা ঘটছে।”

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিহীন রাজধানী ঘোষণা

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় এবং ১৯৮০ সালে পুরো জেরুজালেমকে নিজেদের ‘রাজধানী’ হিসেবে ঘোষণা করে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আজও তা স্বীকৃতি দেয়নি।

মুসলিম বিশ্বের নীরবতা

আবু দিয়াব বলেন, “আরব ও মুসলিম বিশ্বের নীরবতা এবং নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণেই ইসরাইলি দখলদাররা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।” তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “আল-আকসার ওপর প্রতিটি হামলা মূলত এই পবিত্র স্থানকে ধ্বংস করে নতুন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করার এক পরিকল্পিত চক্রান্ত।”

আল-আকসা মসজিদে অব্যাহত আগ্রাসন এবং ধর্মীয় ছুতার আড়ালে চলমান এই দখলদারিত্ব শুধু ফিলিস্তিনিদের জন্যই নয়, বরং গোটা মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্ব ও আবেগের বিরুদ্ধে এক সরাসরি চ্যালেঞ্জ। এই বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক মহলের নিরবতা এবং মুসলিম বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তা এক গভীর প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

এই বিভাগের সর্বশেষ