এপ্রিল ২৯, ২০২৫ ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ
মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আলোর সন্ধানে অচ্ছু জনপদ: বগুড়ার সান্তাহারের হরিজনদের জীবনের গল্প

প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দেশে বসবাস করা ৫৫ লাখ দলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম হরিজন সম্প্রদায়। সংখ্যায় তারা প্রায় ১৫ লাখ। ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ হিসেবে পরিচিত হলেও, মহাত্মা গান্ধির ভাষায় এরা ‘ভগবানের সন্তান’। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সমাজের প্রান্তে থেকেও অবিচল তাদের মানবিক সেবা ও সহনশীলতা।

এক সময়ের ব্রিটিশ শাসনের মাধ্যমে এদেশে আগত এই জনগোষ্ঠীকে নানা কৌশলে বাধ্য করা হয় নিচু পেশায় নিযুক্ত হতে। সেইসঙ্গে তাদের অভ্যস্ত করে তোলা হয় নেশার জগতে, যার ফলে সমাজ তাদের দূরে সরিয়ে দেয় ‘অস্পৃশ্য’ কিংবা ‘অচ্ছু’ হিসেবে। আজও অনেকাংশেই তারা সমাজের মূলধারার বাইরে।

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর এলাকার রেলওয়ে জংশনের পাশে অবস্থিত হরিজন কলোনিতে বসবাস করে প্রায় ৫৭২ জন হরিজন। ১৩৩টি পরিবার একটিমাত্র ছোট পরিসরের কলোনিতে গাদাগাদি করে বসবাস করছে। পুরুষ সদস্য ১৭৮ জন, নারী ১৮২ জন। পেশায় তারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী হলেও কেউ কেউ এখন হস্তশিল্পেও যুক্ত। তবে বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, পানীয় জল, কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ ও পায়খানা সংকট—সব মিলিয়ে তাদের জীবন দুর্বিষহ।

সান্তাহার হরিজন সমিতির সাবেক সভাপতি যমুনা বাঁশফোর ডাকঘর নিউজকে বলেন—

“আবাসন সমস্যা আমাদের প্রধান সমস্যা। একসময় আমরা অফিসে ঢুকতেও পারতাম না, ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারত না। এখন অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে।”

সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম কুমার ডাকঘর নিউজকে জানান, তাদের নিজস্ব শ্মশান না থাকায় দাহ কার্য নিয়েও রয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ।

বর্তমান সভাপতি বৈরাগি বাঁশফোর ডাকঘর নিউজকে বলেন—

“স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নেই, পানির ব্যবস্থা অনিয়মিত, মাদকপ্রবণতা বাড়ছে, যুবকেরা বেকার। এগুলো আমাদের প্রতিদিনের লড়াই।”

দুটি বেসরকারি সংস্থা হরিজন শিশুদের জন্য পাকাঘর নির্মাণ করে প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করেছে। তাতে মাত্র ২৫ জন শিশু শিক্ষার আলো পাচ্ছে। আশ্চর্যজনকভাবে, যেই ওয়ার্ডে হরিজনরা বসবাস করেন, সেখানে নেই কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে অনেক শিশুকে দূরবর্তী বিদ্যালয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয়।

সান্তাহার পৌরসভার সাবেক মেয়র আলহাজ তোফাজ্জল হোসেন ডাকঘর নিউজকে বলেন—

“হরিজন কর্মীদের বেতন ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছে। পানির সরবরাহ নিশ্চিত করার কাজ চলছে।”

বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ১৪৮ জন হরিজন চাকরি করছেন। যদিও চাহিদার তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল।

একটি প্রশ্ন থেকেই যায়—যারা আমাদের শহর, হাসপাতাল, অফিস, রেলস্টেশন পরিষ্কার রাখে, তারা কেন এখনও সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত? এই ‘ভগবানের সন্তানদের’ জন্য কি আর একটু মানবিক হওয়ার সময় আসেনি?

এই বিভাগের সর্বশেষ